জাপানের টোকোনামে শহর। বিকেলবেলা ট্র্যাকের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক দর্শক, প্রকৌশলী ও বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সবার অপেক্ষা—বাংলাদেশ থেকে আসা তরুণ প্রকৌশলীরা তাদের তৈরি রেসিং কার নিয়ে নামবেন ‘ফর্মুলা এসএই জাপান ২০২৫’ প্রতিযোগিতায়।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) দল ‘টিম ক্র্যাক প্লাটুন’ হাজির হয়েছিল তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘সিপি-অ্যাস্টরিয়ন’ নিয়ে। দলের ক্যাপ্টেন সাদমান সাকিব বলেন,
“প্রথমবার যখন আমাদের গাড়ি ইলেকট্রিক্যাল ইন্সপেকশন পাস করল, মনে হয়েছিল আমরা শুধু একটা দল নই, পুরো বাংলাদেশকেই উপস্থাপন করছি।”
শুরুটা স্বপ্ন থেকে
২০১৫ সালে কয়েকজন রুয়েটিয়ান একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন—দেশে বসেই তৈরি করবেন ফর্মুলা রেসিং কার। তখন অনেকের কাছে সেটা ছিল দুঃসাহসিক কল্পনা। কিন্তু সেই স্বপ্ন থেকেই জন্ম নেয় ‘টিম ক্র্যাক প্লাটুন’।
২০১৬ সালে ভারতে কোয়াড বাইক চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তারা প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ নেয়। পরে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে ফর্মুলা এসএই জাপানে প্রতিযোগিতা করে, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রদর্শন করে বাংলাদেশকে তুলে ধরে। আর এবার, ৮–১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় তারা অর্জন করেছে ১৮তম স্থান।
এক বছরের প্রস্তুতি
২০২৫ সালের প্রতিযোগিতার জন্য দলটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। দলে ছিলেন রুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী, তবে জাপানে অংশ নেন ২৭ জন, সঙ্গে একজন শিক্ষক উপদেষ্টা।
প্রস্তুতির সময় গাড়ির প্রতিটি অংশ আলাদা শিক্ষার্থীর দায়িত্বে ছিল—কেউ ব্যাটারি, কেউ মোটর, কেউ আবার নিরাপত্তা সার্কিট।
‘সিপি-অ্যাস্টরিয়ন’-এ ব্যবহৃত হয়েছে টেসলার ব্যাটারি মডিউল ও শক্তিশালী পিএমএসএম মোটর। গাড়ির বডি বানানো হয়েছে গ্লাস ফাইবার দিয়ে—হালকা অথচ টেকসই। উচ্চ গতিতে ভারসাম্য রাখতে লাগানো হয়েছে অ্যারোডাইনামিক উইং। নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক মানের সুরক্ষা ব্যবস্থা সংযোজন করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওয়ার্কশপে কাজ করেছেন। পরীক্ষার চাপ, অর্থসংকট—সবকিছুর মধ্যেই এগিয়েছে কাজ। সাদমান বলেন,
“টিমওয়ার্ক, পরিকল্পনা আর সঠিক ডকুমেন্টেশনই আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে।”
অর্জন ও অনুপ্রেরণা
পুরো দক্ষিণ এশিয়া থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল একমাত্র বাংলাদেশ দল। জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দলের ভিড়ে তাই শুরুতে দুশ্চিন্তা ছিল। তবে তারা সফলভাবে ইলেকট্রিক্যাল ও টেকনিক্যাল ইন্সপেকশন পাস করে নতুন মাইলফলক গড়েছে।
পরে ‘কস্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং’, ‘ডিজাইন’ ও ‘পিআর’ ক্যাটাগরিতেও অংশ নেয় দলটি। শেষ পর্যন্ত পিআর অ্যাওয়ার্ডসে তারা জিতেছে তৃতীয় স্থান।
সাদমানের ভাষায়,
“আমরা চাই দেশের তরুণ প্রকৌশলীরা জানুক—ফর্মুলা কার খাতেও আমাদের সম্ভাবনা অসীম। সীমিত সামর্থ্য নিয়েও আমরা সাফল্য আনতে পারি। এই অর্জন আমাদের আগামীতে আরও বড় মঞ্চে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেবে।”
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন