
কলা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। শুধু কাঁচা বা পাকা কলাই নয়, কলার থোড় ও কলার মোচা-ও আমাদের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। এটি কৃষিজ উৎপাদন হলেও বিশ্বের অনেক দেশে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। গ্রামীণ সমাজে বহু বছর ধরে রান্না করে খাওয়া হয়।
শুধু স্বাদের জন্য নয়, আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, কলার মোচা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থতা বজায় রাখতে কার্যকর।
কলার মোচার পুষ্টিগুণ
কলার মোচা ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও আঁশে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম মোচায় রয়েছে—
-
ক্যালরি: ৫১ কিলোক্যালরি
-
প্রোটিন: ১.৬ গ্রাম
-
ফ্যাট: ০.৬ গ্রাম
-
কার্বোহাইড্রেট: ৯.৯ গ্রাম
-
আঁশ (ডায়াটারি ফাইবার): ৫.৭৪ গ্রাম
-
আর্দ্রতা: ৮৮.৭৫ গ্রাম
-
পটাশিয়াম: ৫৫৩.৩ মিলিগ্রাম
-
ক্যালসিয়াম: ৩৩.২৭ মিলিগ্রাম
-
ম্যাগনেসিয়াম: ৪৮.৭ মিলিগ্রাম
-
ফসফরাস: ৫৩.২৭ মিলিগ্রাম
-
লৌহ (আয়রন): ৫৬.৪ মিলিগ্রাম
-
ভিটামিন সি: ৪২০ মিলিগ্রাম
-
এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি-৬, ই এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
কলার মোচার স্বাস্থ্য উপকারিতা
-
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়া সুস্থ রাখে।
-
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমায়: ডায়েটারি ফাইবার দীর্ঘ সময় তৃপ্তি বজায় রাখে, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
-
রক্তবর্ধক: লৌহ উপাদান হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
-
মাসিক সমস্যায় সহায়ক: প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও ব্যথা কমায়।
-
মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনে সহায়ক: প্রসূতি নারীদের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
-
ক্যানসার প্রতিরোধে: ফেনোলিক অ্যাসিড, ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল নষ্ট করে।
-
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়, মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কলার মোচা খাওয়ার পদ্ধতি
-
ভর্তা বা ভাজি: মশলা ও নারকেল দিয়ে রান্না করা যায়।
-
ঝোল বা ডাল: মাছ বা ডালের সঙ্গে রান্না করলে সুস্বাদু হয়।
-
চপ বা পাকোড়া: মোচা কেটে মশলা মিশিয়ে ভাজা যায়।
-
সালাদ বা স্যুপ: সেদ্ধ করে সালাদ বা স্যুপে ব্যবহার করা যায়।
রান্নার টিপস: অতিরিক্ত তেল-মশলা ব্যবহার কমালে পুষ্টিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
সতর্কতা
-
বেশি খেলে গ্যাস বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
-
রান্নার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ভিজিয়ে নিন।
-
ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণমতো খেতে হবে।
-
গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি খাওয়া এড়াবেন।
-
কিডনি রোগীদের জন্য পটাশিয়াম বেশি হওয়ায় সীমিত খাওয়া জরুরি।
-
অ্যালার্জি প্রবণ ব্যক্তিদের সাবধান হতে হবে।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন