বিদ্যুৎ ও পানি সংকট ঘিরে চলমান বিক্ষোভে অন্তত ২২ জনের প্রাণহানির পর মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা তার সরকার ভেঙে দিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া আন্দোলন সোমবারও অব্যাহত থাকে। রাজধানী আন্তানানারিভোর তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা জীবনযাত্রার অবনতি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও পানির ঘাটতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে।

স্থানীয় টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শহরের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল ও সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।

এসময় রাজধানীর বিভিন্ন সুপারমার্কেট, ইলেকট্রনিকস দোকান ও ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এমনকি কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার এক টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা সরকারের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "আমাদের মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আমরা ক্ষমা চাইছি। জনরোষ আমি বুঝতে পারছি। বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে মানুষের কষ্ট আমরা উপলব্ধি করি।"

তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন এবং তরুণদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্যমতে, হতাহতদের মধ্যে শুধু বিক্ষোভকারী নন, সাধারণ মানুষও রয়েছেন। কেউ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে, আবার কেউ লুটপাট ও গ্যাং সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব তথ্য অস্বীকার করে একে ‘গুজব ও ভ্রান্তি’ বলে অভিহিত করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৩ সালের পুনর্নির্বাচনের পর এটি প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট। প্রায় তিন কোটি জনসংখ্যার মাদাগাস্কার আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছিলেন।

এই আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, তারা কেনিয়া, নেপাল ও মরক্কোয় সাম্প্রতিক তরুণ আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত। আন্তানানারিভোর বিক্ষোভে নেপালের পতাকাও দেখা গেছে, যা চলতি মাসেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আন্দোলনে ব্যবহৃত হয়েছিল।